Image description

আজিবুল হক পার্থ
আরটিএনএন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহিদি মার্চে’ মানুষের ঢল নামে। বৃহস্পতিবার নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। এ সময় দেশের যে কোনো প্রয়োজনে জীবন দিতে ছাত্র-জনতা প্রস্তুত আছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। একইসঙ্গে পরাজিত শক্তির সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

এদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজু ভাস্কর্য থেকে মার্চ শুরু হয়। এর আগে দুপুর আড়াইটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ নানা শ্রেণিপেশার লক্ষাধিক মানুষ এতে অংশগ্রহণ করে। প্রথমে তারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন।

বেশির ভাগের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা যায়। মার্চটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় তারা ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘শহিদদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’, ‘শহিদদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে’, ‘সরকার কী করে, হাসিনা ভারতে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছে জানিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনে শহিদদের স্মরণে আজকে আমরা এই মার্চে এসেছি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের আন্দোলন চলেছে। এখন সময় ক্লাসে ফিরে যাওয়ার। তবে আজকের এই মার্চের প্রধান বার্তা হচ্ছে আবার প্রয়োজন হলে ছাত্র-জনতা জীবন দিতেও প্রস্তুত আছে।

রাজধানী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. বেলাল আহমেদ। তিনি এলিফ্যান্ট রোডের ভূতের গলি এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে আসেন। বেলাল বলেন, আজকে অফিস শেষে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এসেছি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস হয়েছে। কিন্তু যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদের হত্যা করেছে, তাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। আজকের কর্মসূচি থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আসা অভিভাবক তাহমিনার রহমান বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন তাদের স্মরণেই আজকের এই মার্চ। আমি আমার দুই কন্যাকে নিয়ে এসেছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন থেকেই অভিভাবক হিসাবে আমি তাদের পাশে ছিলাম। আজকে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পারছি। আমরা ৫২ কিংবা ৬৯ দেখিনি তবে ২৪ এর আন্দোলন দেখেছি যা পুরোনো আক্ষেপগুলোকে ঘুচিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে শুধু একটা কথাই বলতে চাই। তোমাদের যে কোনো যৌক্তিক দাবিতে দেশের সব অভিভাবক পাশে থাকবে। এদেশে অবশ্যই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যেখানে সবাই মিলেমিশে বসবাস করব।

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মুতাওসিতা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র কাওসার আহমেদ বলেন, আজকে আমরা একটি বার্তা দেওয়ার জন্যই এখানে এসেছি যে, যারা পরাজিত শক্তি আছেন তারা যাতে না ভাবেন শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমরা দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সাড়া দিতে প্রস্তুত আছি। পরাজিত শক্তিরা যাতে ভেতরে ভেতরে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে বিষয়েও তাদের সাবধান করছি।