Image description

নিউজ ডেস্ক 
আরটিএনএন: হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি, অজান্তেই চমকে ওঠি, জীবন, ফুরালো নাকি! এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে…রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর- কবিতার লাইনের মতোই একদিন জীবন প্রদীপ নিভে যায় সবার। অথচ, ক্ষণজন্মা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য কতশত আয়োজন মানুষের। কেননা, বেঁচে থাকার মতো এত আন্দন্দের আর কিছু হয় না। তাই সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে কত কিছুই না করে মানুষ। অথচ, একটা সময় ঠিকই চলে যেতে হয়।

তবে দীর্ঘায়ু প্রত্যাশা থাকে সবার। বেঁচে থাকার জন্য করে নানা আয়োজন। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ মানুষটি ১১২ বছরে পা দিয়েও জানে না এতকাল ধরে তার বেঁচে থাকার রহস্য। বলছিলাম ১৯১২ সালের ২৬ আগস্ট লিভারপুলে জন্ম নেওয়া জন টিনিসউডের কথা। ১১২ বছরে পা দিয়ে যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ হিসেবে কথা বলেছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

এতদিন বেঁচে থাকার পেছনে রহস্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কেন তিনি এতদিন বেঁচে আছেন– তা নিয়ে তার কোনো ধারণা নেই।

লিভারপুলে জন্ম গ্রহণ করায় এই ক্লাবের পার ভক্ত জন টিনিসউড। বর্তমানে সাউথপোর্টের একটি কেয়ার হোমে থাকেন তিনি। গত এপ্রিলে ১১৪ বছর বয়সী জুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরার মৃত্যুর পর এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ তিনি।

নিজের জীবন নিয়ে টিনিসউড বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় বেশ কর্মঠ ছিলাম এবং অনেক হাঁটতাম। তবে আমি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে করি না। আপনি হয় দীর্ঘজীবী হবেন বা স্বল্পজীবী হবেন। এবং এ বিষয়ে আপনি তেমন কিছুই করতে পারবেন না।’

টাইটানিক ডুবে যাওয়ার বছরে জন্ম নেওয়া টিনিসউড ১১২ বছরে পা রাখার বিষয়ে বলেন, ‘এটাও জীবনের অন্যান্য ঘটনা আমি যেমনভাবে নেই, সেভাবেই নিচ্ছি। কেন আমি এতদিন বেঁচে আছি, তা আমার ধারণাতেও নেই। কোনো বিশেষ রহস্য নেই আমার জীবনে।’

তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্মি পে কর্পসে প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন, যেখানে তিনি আটকে পড়া সৈন্যদের খুঁজে বের করা এবং খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতেন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ।

টিনিসউড ১৯৪২ সালে তার স্ত্রী ব্লডওয়েনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের মেয়ে সুসান ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তার স্ত্রীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে ৪৪ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তিনি শেল এবং ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামে একজন হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯৭২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

প্রতি শুক্রবারে একবার ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ [জনপ্রিয় ব্রিটিশ খাবার] খাওয়া ছাড়া কোনো বিশেষ নিয়ম মেনে চলেন না বলে জানিয়েছেন টিনিসউড। তিনি বলেন, ‘যা দেওয়া হয়, তাই খাই, সবাই যেমন খায়। আমার কোনো বিশেষ খাদ্যাভ্যাস নেই।’

২০১২ সালে ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে তিনি প্রতি বছর রাজপরিবার থেকে জন্মদিনের কার্ড পেয়ে আসছেন— প্রথমে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে, যিনি তার চেয়ে প্রায় ১৪ বছরের ছোট ছিলেন এবং এখন রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে।

তার শৈশব থেকে বর্তমান দুনিয়া কতটা পরিবর্তিত হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মতে খুব একটা ভালো হয়নি বা তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। সম্ভবত কিছু জায়গায় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অন্য জায়গায় অবনতি হয়েছে।’

বিশ্বের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দিন বয়স্ক জীবিত পুরুষ ছিলেন জাপানের জিরোয়েমন কিমুরা, যিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে ছিলেন এবং ২০১৩ সালে মারা যান। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী এবং সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি হলেন জাপানের ১১৬ বছর বয়সী তোমিকো ইতোওকা।