নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন: নিজস্ব মুদ্রায় ঋণ দিয়ে সুদের হার বাড়াতে চায় চীন। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বর্তমান সুদের হারের চেয়ে আরও কম সুদ প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। চীনের সুদের হার বাড়ানোর প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য মনে করছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা।
এখনো বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় ইউয়ানে ঋণ পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে আছে। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে শিগগিরই একটি বৈঠকের জন্য চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মার্কিন ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রা ‘ইউয়ান’-এ ঋণ গ্রহণ করার প্রস্তাব দেয় চীন। এক্ষেত্রে সফলভাবে লেনদেন করতে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় মতামত দিতে এর আগে অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
এ চিঠির জবাবে সম্মতি জানায় দুটি সংস্থা। কিন্তু সমস্যা বাধে সুদের হার নিয়ে। চীন তাদের নিজস্ব মুদ্রায় ঋণ দিতে ৩ শতাংশ সুদের হার করার কথা জানায়। বর্তমানে যেখানে চীনের সব ধরনের ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদের হার আছে। সেখানে ১ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়টিতে আপত্তি জানায় অর্থ বিভাগ।
এক্ষেত্রে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ সুদের হার করতে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। এ চিঠি দেওয়ার প্রায় ৩/৪ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো উত্তর দেয়নি চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে দরকষাকষির বিষয়টি অব্যাহত রেখেছে ইআরডি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আজম বৃহস্পতিবার বলেন, চীনের নিজস্ব মুদ্রায় ঋণ নিতে পারলে ভালো হয়। এতে ডলারের চাপ কমবে। তবে এক্ষেত্রে হঠাৎ করে সুদের হার বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। নেগোশিয়েশন (আলোচনা) করে সুদের হার একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। এজন্যই তো নেগোশিয়েশন সিস্টেম চালু আছে। তবে আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থায় একটা স্ট্যান্ডার্ড সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে, সেখানে কিছু করা যায় না। কিন্তু চীন বা অন্যান্য দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী হলে দরকষাকষি করে সুদের হার কমানো সম্ভব।
ইআরডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, বর্তমান চলমান ঋণে সুদের হার কমানো বা রেয়াতকাল ও ঋণ পরিশোধের সময় বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। একবার চুক্তি হয়ে গেলে সেই চুক্তি ভেঙে কিছু করার সুযোগ থাকে না। আগামী দিনে নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে চীনা মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি অফিসগুলোয় ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রকল্পে চীনের ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা এবং প্রেফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) হিসাবে চীনা মুদ্রায় নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সাধারণত মার্কিন ডলারে ঋণ পরিশোধ করে। কিন্তু চীনের ঋণে সুদহার কম থাকায় রিজার্ভ থেকে ইউয়ান কিনে ঋণ পরিশোধ করলে দেশের অর্থ সাশ্রয় হবে।
এতে রিজার্ভ কমে যাওয়াও থামবে। এ ঋণের আওতায় পণ্য আমদানির সময় এর সঙ্গে অন্য দেশের তুলনামূলক দর যাচাই করতে হবে। চীন থেকে কেনা পণ্যের দাম যদি অন্য দেশের তুলনায় কম বা সমান হয়, তা আমাদের জন্য ভালো হবে। চীনা ঋণ নিয়ে এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে, যার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ে। যদি এ ঋণের অর্থ অবকাঠামোর পেছনে ব্যয় হয়, তাহলে সেখান থেকে আউটপুট হবে অল্প, যা ঋণ পরিশোধে চাপ সৃষ্টি করবে।
সূত্র জানায়, চীনের ঋণ বিধিমালার আওতায় প্রেফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটের অর্থ দিয়ে ৬৫ শতাংশ নির্মাণসামগ্রী চীন থেকে কিনতে হয়। আর ৪০ শতাংশ সরঞ্জাম চীনের বাইরে থেকে কেনা যায়। তবে অন্য দেশ থেকে কিনলেও ইউয়ানেই আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলার দিয়ে ইউয়ান কিনতে হবে। এতে মুদ্রা রূপান্তরের ঝুঁকি আছে এবং তাতে প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয়ও বাড়তে পারে। চীন থেকে দেশের রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন ডলার। সে তুলনায় আমদানি ব্যয় প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। আর এ বাণিজ্য ডলারেই হয়ে থাকে।
সূত্রমতে, দেশে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ কোটি ইউয়ান (প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমান) ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে মূল ও সুদসহ ৩২০ কোটি ইউয়ান পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে চীনা অর্থায়নের ১০টি প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি প্রকল্পের অনুকূলে প্রস্তাবিত ৯৪৯ কোটি ইউয়ান (প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার) ঋণ নিতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। এসব ঋণ নেওয়া হলে চীনা মুদ্রায় বাংলাদেশের মোট ঋণ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৫৮৪ কোটি ইউয়ানে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে ইউয়ান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) বাস্কেটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে চীন থেকে নেওয়া ইউয়ানভিত্তিক ঋণের বিপরীতে ২০১৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ইউয়ান পরিশোধ করেছে। ফলে ভবিষ্যতে ইউয়ানে নেওয়া ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।