
খেলা ডেস্ক
আরটিএনএন: তাওহিদ হৃদয়ের লড়াকু প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি ৩৫/৫ থেকে বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ২২৮ পর্যন্ত। সদ্য আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটারের সিংহাসনে বসা শুবমান গিলের মন্থর শতকে জয় স্পর্শ করতে বেগ পেতে হলো ভারতকে। ২১ বল ও ছয় উইকেট হাতে রেখে ভারতের কষ্টে-সৃষ্টে পাওয়া জয়ের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম পাওয়ারপ্লেতে তাদের ব্যাটিং এবং গোটাদুয়েক ক্যাচ ও একটি রানআউটের সুযোগ হাতছাড়া করাটাকে দায়ী করেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাওয়া শান্তর স্বপ্নের সূর্য প্রথম ডুবল কাল দুবাইয়ে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে উদ্বোধনী জুটিতে ৬৯ রান তুলেও শেষেরদিকে রান পেতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে ভারতকে। টস জিতে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করা বাংলাদেশ ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে অন্ধকার টানেলে প্রবেশ করেছিল। তাওহিদ হৃদয়ের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি সেখান থেকে বাংলাদেশকে ২০০ পার করিয়েছিল। কিন্তু তার হৃদয় ভেঙে শান্তদের শুরুটা হলো হার দিয়ে। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের বাকি দুই ম্যাচ পাকিস্তানে। রাওয়ালপিন্ডিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ভারতের শুরুটা হয়েছিল আরও দুর্দান্ত। তাসকিন আহমেদের বলে আউট হওয়ার আগে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৩৬ বলে করেন ৪১ রান। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমানকে বাউন্ডারি মেরে ওয়ানডেতে ১১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন রোহিত। পাওয়ারপ্লেতে এক উইকেটে ৫৯ রান তোলা ভারত খুব বেশি চাপে পড়েনি কখনো। বিরাট কোহলি (২২), শ্রেয়াস আয়ার (১৫) ও অক্ষর প্যাটেল (৮) আউট হলে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ১৪৪/৪। এরপর একটি রানআউটের সুযোগ নষ্ট ও রাহুলের ক্যাচ মিস ছাড়া বড় কোনো চাপে পড়তে হয়নি তাদের। দুটি উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। একটি করে পান তাসকিন ও মোস্তাফিজ।
এক রানে এক, দুই রানে নেই দুই উইকেট। নবম ওভারের মধ্যে ৩৫ রানে হাওয়া পাঁচ উইকেট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে বিভীষিকাময়। শিরোপা জয়ের স্বপ্ন আর বাস্তবতার মুখোমুখি পরিস্থিতির মধ্যে ফারাকটা তখন বুঝে যান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ভারতের বিপক্ষে এমন দুঃসহ শুরুর পর বাংলাদেশ দল যে ২২৮ রান করতে পারবে সেটা কেই-বা ভাবতে পেরেছিলেন। ষষ্ঠ উইকেটে তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলীর ১৫৪ রানের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশ শেষমেশ সম্মানজনক স্কোর গড়তে পারে। শূন্য রানে জীবন পাওয়া জাকের আলী ভালো সঙ্গ দিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান তাওহিদকে। দু’বার জীবন পাওয়া জাকের ১১৪ বলে চারটি চারে খেলেন ৬৮ রানের ইনিংস। শেষদিকে পায়ে টান লাগা তাওহিদ ১১৮ বলে দুই ছক্কা ও ছয় চারে করেন ঠিক ১০০ রান। ৫৩ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার মোহাম্মদ শামি। আইসিসি টুর্নামেন্টে মাত্র ১৯ ম্যাচে ৬০ উইকেট নিয়ে তিনি এখন ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ৩১ রানে তিন উইকেট নেন আরেক পেসার হর্ষিত রানা।
জাকের ও হৃদয়ের উইকেট যাওয়ার পর ছিল টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ। স্লিপে জাকেরের ক্যাচ ভারত অধিনায়ক রোহিত শার্মা না ছাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। বাংলাদেশ ৩৫ রানে হারাত ষষ্ঠ উইকেট, হ্যাটট্রিক হতো অক্ষর প্যাটেলের। জাকেরের পর জীবন পান তাওহিদও। সেটা কাজে লাগিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরির উষ্ণ ছোঁয়া। ৮৭ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া জাকেরের শেষটা ভালো হয়নি। দুইশ’র কাছে দলকে রেখে শামির বলে আউট হয়ে ফেরেন তিনি। শামির স্লোয়ারে ভাঙে ষষ্ঠ উইকেট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের জুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ১৫০ রানের জুটিতে আগের রেকর্ড গড়েছিলেন জাকের।
জাকের ফিরলেও হার মানেননি তাওহিদ। ৪৭তম ওভারে মাংশপেশিতে টান লাগে। শরীর না চললেও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় লড়াই চালিয়ে যান তিনি। ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না, রান নিচ্ছিলেন হেঁটে। ৮৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা তাওহিদ তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান ১১৪ বলে।
শামির বল ডিপ পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোরকমে প্রান্ত বদল করে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তাওহিদ। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ও আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির পর সতীর্থ তাসকিন আহমেদকে জড়িয়ে ধরলেন। ড্রেসিংরুমের সামনে তখন সতীর্থদের করতালি। ব্যাট উঁচিয়ে দু’হাত চারদিকে ঘুরিয়ে দর্শক অভিবাদনের জবাব দেন তাওহিদ। এরপর হাত তুলে দোয়াও করলেন। শেষ ওভারে হর্ষিতের বলে তাওহিদের আউটেই ২২৮ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
অথচ শুরুটা একটু ভালো হলে চিত্রটাও ভিন্ন হতে পারত। প্রথম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। পরের ওভারে হর্ষিত ফেরান নাজমুল হোসেনকে। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু তাওহিদের ব্যাটে। কিন্তু শামির তোপে অপরপ্রান্তে ৩৫ রানের মধ্যে আরও তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ।